রাজধানীর পূর্বাচলে বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টার নির্মাণ করেছে সরকার। ২০ একর জমির ওপর নির্মিত এক্সিবিশন সেন্টারটি রবিবার (৭ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ সরকারের কাছে বুঝিয়ে দিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চাইনিজ স্টেট কন্সট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন। এক্সিবিশন সেন্টারটির নাম রাখা হবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে। এ বিষয়ে চীনের সম্মতিও পাওয়া গেছে।
সেন্টারটি নির্মাণের একটি বড় অংশ চীন সরকার অর্থায়ন করেছে। সব ঠিক থাকলে এখানেই প্রতিবছর অনুষ্ঠিত হবে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে- মোট ছয়টি উদ্দেশ্যে সরকার নির্মাণ করেছে চায়না- বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টার। উদ্দেশ্যগুলো হচ্ছে- ১। বাংলাদেশের সামগ্রিক বাণিজ্য আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সম্প্রসারণ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে দেশি-বিদেশি পণ্য উৎপাদনকারী ও ক্রেতাদের বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক মানের একটি কমন প্লাটফর্মে সরাসরি যোগাযোগের সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়া। ২। প্রতিযোগিতার সুযোগ সৃষ্টি করে পণ্যের গুণগত মান বৃদ্ধি ও বৈচিত্র্য নিয়ে আসা। ৩। দেশি-বিদেশি প্রতিযোগী উৎপাদকের পণ্যের মান ও মূল্য সম্পর্কে সরাসরি তুলনা করার সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়া। ৪। একই প্লাটফর্মে সারাবছর পণ্যভিত্তিক মেলা ও সাধারণ বাণিজ্য মেলাসহ শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক বিভিন্ন প্রকার আয়োজনের সুযোগ সৃষ্টি করা। ৫। স্থানীয় পণ্যের গুণগত মান ও কম্পিটিটিভনেস বৃদ্ধির পরিবেশ সৃষ্টি করা ও ৬। আধুনিক কারিগরি সুযোগ সুবিধা বিশিষ্ট স্বয়ংসম্পূর্ণ সেন্টার তৈরি করে বাংলাদেশে একটি আন্তর্জাতিক ব্যবসা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা।
ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত মি লি জিমিংয়ের কাছ থেকে চায়না-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারের দায়িত্ব আনুষ্ঠানিকভাবে বুঝে নিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
সেন্টার হস্তান্তর অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী জানান, চীন বাংলাদেশের বড় ব্যবসায়িক অংশিদার। বাংলাদেশ রফতানি পণ্য তৈরি করতে যন্ত্রপাতি এবং পণ্যের কাঁচামাল চীন থেকে আমদানি করে বিভিন্ন দেশে রফতানি করে। বর্তমানে বাংলাদেশের ৮ হাজার ২৫৬টি রফতানি পণ্যের ওপর ডিউটি ফ্রি মার্কেট সুবিধা দিচ্ছে চীন। চীনে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক, পাট পণ্য, চামড়াজাত পণ্য রফতানিও বাড়ছে।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, এ সেন্টার নির্মাণের ফলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার আয়োজন করা সহজ হবে। ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার পাশাপাশি বছরব্যাপী এখানে অন্য মেলারও আয়োজন করা সম্ভব হবে।
উল্লেখ্য, পূর্বাচল নতুন শহরে ২০ একর জমির ওপর বাস্তবায়িত ‘চায়না-বাংলাদেশ ফ্রেডশিপ এক্সিবিশন সেন্টার’ নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১ হাজার ৩০৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এর মধ্যে চীনের অনুদান ৬২৫ কোটি ৭০ লাখ টাকা। ৩৩ হাজার বর্গমিটারে ফ্লোর স্পেসের মধ্যে ভবন নির্মাণ করা হয়েছে ২৪ হাজার ৩৭০ বর্গমিটার। এক্সিবিশন হলের আয়তন ১৫ হাজার ৪১৮ বর্গমিটার। এতে ৮০০টি স্টল সাজানো যাবে। দোতলায় পার্কিং বিল্ডিংয়ের আয়তন ৭ হাজার ৯১২ বর্গমিটার। রাখা যাবে ৫০০টি গাড়ি। এ ছাড়া এক্সিবিশন বিল্ডিংয়ের সামনে খোলা জায়গায় আরও এক হাজার গাড়ি পার্কিংয়ের সুযোগ রয়েছে।
এক্সিবিশন সেন্টারে ৪৭৩ আসন বিশিষ্ট একটি মাল্টি ফাংশনাল হল, ৫০ আসন বিশিষ্ট একটি কনফারেন্স রুম, ৬টি নেগোশিয়েশন মিটিং রুম, ৫০০ আসনের রেস্তোরাঁ, শিশুদের খেলার স্পেস, নামাজের রুম, ২টি অফিস রুম, মেডিক্যাল বুথ, ডরমেটরি/গেস্ট রুম, ১৩৯টি টয়লেট, বিল্ট-ইন পাবলিক এড্রেস সিস্টিম, নিজস্ব ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট, স্টোর রুম, সিসিটিভি কন্ট্রোল রুম, অটোমেটেড সেন্ট্রাল এসি সিস্টেম, ইনবিল্ট ইন্টারনেট, ওয়াইফাই, আলাদা রেজিস্ট্রেশন হল, আধুনিক ফোয়ারা ও ইলেক্ট্রনিক প্রবেশপথ রয়েছে।
চায়না-বাংলাদেশ ফ্রেডশিপ এক্সিবেশন সেন্টার হস্তান্তরপত্রে বাংলাদেশের পক্ষে স্বাক্ষর করেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এবং চীনের পক্ষে করেন ঢাকায় নিযুক্ত চীনের অ্যাম্বাসেডর লি জিমিং।
এক্সিবিশন সেন্টারটির নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৭ সালের ১৭ অক্টোবর। কাজ শেষ হয় ২০২০ সালের ৩০ নভেম্বর।
ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলাকে আন্তর্জাতিক রূপ দিতে ২০১৫ সালে চীনের সহায়তায় ৭৯৬ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেয় ইপিবি। ‘বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টার কমপ্লেক্স’ (বিসিএফইসি) নামের এ প্রকল্প নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার ব্রাহ্মণখালীর বাগরাইয়াটেকের ২০ একর জায়গার ওপর বাস্তবায়ন হয়েছে।
জানা গেছে, ঢাকার শেরেবাংলা নগরের মেলার অস্থায়ী মাঠ থেকে পূর্বাচলে নির্মিত সেন্টারটির দূরত্ব ২৫ কিলোমিটার। রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোড থেকে পূর্বাচলের এ প্রদর্শনী কেন্দ্রটির দূরত্ব প্রায় ১৫ কিলোমিটার। প্রদর্শনী কেন্দ্রে দৃষ্টিনন্দন ঢেউ খেলানো ছাদের নিচে দুই লাখ ৬৯ হাজার বর্গফুটের দুটি পৃথক প্রদর্শনী হল রয়েছে।
জানা গেছে, স্থায়ীভাবে আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী কেন্দ্র করার জন্য ২০০৯ সালে প্রাথমিকভাবে তেজগাঁও পুরনো বিমানবন্দরের ৩৯ একর খালি জায়গা নির্ধারণ করা হয়। পরে সেখানে জায়গা না পাওয়ায় প্রকল্পটি সময়ের বিবেচনায় পূর্বাচল উপশহরে সরিয়ে নেওয়া হয়। ২০১৭ সালের অক্টোবরে প্রদর্শনী কেন্দ্রের নির্মাণকাজ শুরু হয়। প্রকল্প বাস্তবায়নে জমি কেনা বাবদ সরকার দিয়েছে ১৭০ কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী কেন্দ্রে বছরে একবার মাসব্যাপী আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার বাইরেও সারা বছর সোর্সিং ও পণ্য প্রদর্শনী হবে। সে জন্য পাঁচ তারকা হোটেল, নতুন প্রদর্শনী কেন্দ্র, ভূগর্ভস্থ পার্কিং ইত্যাদি করা হবে। এসব স্থাপনার জন্য ইতোমধ্যে বাড়তি ১৫ একর জমি পাওয়া গেছে।